×
রবিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৫ ৭ বৈশাখ ১৪৩২
সংবাদ শিরোনাম :
সংবাদ শিরোনাম: বরগুনা জেলার শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ নির্বাচিত হলেন বামনা থানার ওসি হারুন অর রশিদ হাওলাদার বামনায় যুবদল নেতার চেক জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাৎ: সিসিটিভিতে শনাক্ত বামনায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে নৌবাহিনীর অভিযান বর্তমান কমিটিতেই তৃনমূলের আস্থা,আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ রানা তারুণ্যের আশ্রয়স্থল রাঙ্গাবালী ৮ গ্রামে ঈদের উৎসব আজ জুলাই বিপ্লবে নিহত শহীদ মো. বাবুলের পরিবার পেল তারেক রহমানের ঈদ উপহার সৌদির সঙ্গে মিল রেখে রাজাপুরে অর্ধশত পরিবারে ঈদুল ফিতর উদযাপন কলাপাড়ায় প্রতিবারের মতো এবারো ৫ হাজার পরিবার আগাম ঈদ পালন করলো ঈদের আনন্দ সুরক্ষার সুবর্ণ দিকঃ যৌথ বাহিনীর সফল চেকপোস্ট কার্যক্রম বাবার লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষার হলে মেয়ে
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)
বামনায় যুবদল নেতার চেক জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাৎ: সিসিটিভিতে শনাক্ত
প্রকাশ : শুক্রবার, ১১ এপ্রিল , ২০২৫, ০৫:৪৮:০০ পিএম
গোলাম কিবরিয়া::
GK_2025-04-11_67f901d94660e.png



বরগুনার বামনা উপজেলায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক রিয়াদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যাংক থেকে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল, ২০২৫) বেলা সাড়ে এগারটার দিকে বামনা উপজেলা শহরের সোনালী ব্যাংক, বামনা শাখা থেকে এই অর্থ আত্মসাতের ঘটনাটি ঘটে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই দিন রাতেই সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে অভিযুক্ত রিয়াদ চৌধুরীকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। জানা গেছে, রিয়াদ চৌধুরী জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা ৬৫ হাজার টাকার মধ্যে ইতোমধ্যে ৩০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও প্রাপ্ত একটি ভিডিও ক্লিপ থেকে জানা যায়, বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের বলইবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ৬৭ বছর বয়সী দেলোয়ার হোসেনের ছেলে আবু সালেহ বাচ্চু বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) কর্মরত। ছেলের পাঠানো টাকা নিয়মিতভাবে তোলার সুবিধার্থে বামনা সোনালী ব্যাংক শাখায় তাদের একটি সঞ্চয়ী হিসাব (নম্বর ১৬৪৮২) খোলা হয়। ব্যাংক থেকে টাকা তোলার জন্য চেক বইতে ছেলে আবু সালেহ স্বাক্ষর করে রেখে যান।
ঘটনার দিন, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বৃদ্ধ দেলোয়ার হোসেন ব্যাংকে টাকা তুলতে যান। চেক লেখার জন্য তিনি ব্যাংকের আনসার গার্ড ইমরানের কাছে সাহায্য চান। আনসার গার্ড ইমরান তখন অভিযুক্ত যুবদল নেতা রিয়াদ চৌধুরীকে দেলোয়ার হোসেনকে সাহায্য করার জন্য বলেন। অভিযোগ অনুযায়ী, এই সুযোগে রিয়াদ চৌধুরী বৃদ্ধ দেলোয়ার হোসেনের অগোচরে স্বাক্ষরিত তিনটি চেকের পাতা থেকে একটি পাতা চুরি করে নেন এবং সেই জালিয়াতি করা চেকের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ৬৫ হাজার টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন।
কিছুক্ষণ পর, দুপুর নাগাদ অ্যাকাউন্টধারী আবু সালেহ বাচ্চুর মোবাইলে টাকা উত্তোলনের একটি এসএমএস আসে। এসএমএস দেখে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তার বাবা দেলোয়ার হোসেনকে ফোন করে বিষয়টি জানান। দেলোয়ার হোসেন দ্রুত ব্যাংকের শাখায় যান এবং ম্যানেজারের কাছে ঘটনাটি খুলে বলেন। ব্যাংক ম্যানেজার তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নিয়ে রিয়াদ চৌধুরীর কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে, বাকি ৩৫ হাজার টাকাও উদ্ধার করে দেলোয়ার হোসেনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
চেক জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত রিয়াদ চৌধুরীর পরিচয় অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যায় যে তিনিই বৃহস্পতিবার দুপুরে বামনা সোনালী ব্যাংক থেকে ৬৫ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। তার পুরো নাম চৌধুরী রিয়াদ। তিনি বামনা উপজেলা সদরের পশ্চিম সফিপুর গ্রামের মৃত নওয়াব চৌধুরীর ছেলে এবং জন্মলগ্ন থেকে তার নানাবাড়িতেই থাকেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৪৫ বছর বয়সী রিয়াদ চৌধুরীর শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণী। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় চাঁদাবাজির অভিযোগে অতিষ্ঠ হয়ে সেনাবাহিনী তাকে গ্রেফতার করে ডিটেনশন দিয়েছিল বলেও তথ্য পাওয়া যায়।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, রিয়াদ চৌধুরী প্রথম পরিচয়ে বা কারো সাথে কথা বলার শুরুতে এমন ভাব দেখান যেন বামনা উপজেলায় তার চেয়ে বড় কোনো নেতাই নেই। তাকে প্রায় প্রতিদিনই বামনা থানা রোডের মাথায় জলিল ভাইয়ের চায়ের দোকানে দেখা যায়। থানার আশেপাশে কোনো অসহায় বা দরিদ্র মানুষকে দেখলে তিনি নিজেই তাদের থানায় নিয়ে গিয়ে দালালি শুরু করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের অনেকে রিয়াদ চৌধুরীকে ‘থানার দালাল’ হিসেবেও জানেন।
অভিযোগ আরও গুরুতর। স্থানীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, রিয়াদ চৌধুরী জুলাই-আগস্ট মাসের পর থেকে যুবদলের দলীয় পদবী ব্যবহার করে ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করেন। বামনা উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়কের পদবী ব্যবহার করে দালালি এবং অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংক, বামনা শাখার ম্যানেজার (প্রিন্সিপাল অফিসার) মো: কায়সার হোসেন জানান, ভুক্তভোগী দেলোয়ার হোসেনের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে সিসিটিভি ফুটেজ ও অভ্যন্তরীণ তদন্তের মাধ্যমে তিন সদস্যের একটি জালিয়াতি চক্রকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, বামনা উপজেলা বিএনপির সম্মানিত আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদ রানার সহযোগিতায় জালিয়াতি করে আত্মসাৎকৃত টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এই ঘটনায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন।
এদিকে, অভিযুক্ত রিয়াদ চৌধুরীর সাথে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
বরগুনা জেলা যুবদলের সভাপতি মো: জাহিদ হোসেন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদুল ইসলাম জুয়েল এই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, বামনা উপজেলা যুবদল নেতা রিয়াদ চৌধুরীর জালিয়াতির এই ধরনের কর্মকাণ্ডের কথা তারা শুনেছেন। ঘটনার সঠিক তদন্তের পর দলীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দোষী প্রমাণিত হলে তাকে যুবদল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে বলেও তারা জানান।
বামনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: হারুন অর রশীদ হাওলাদার জানান, যুবদল নেতা রিয়াদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে তার থানার অনেক এসআই, এএসআই ও কনস্টেবল মৌখিক অভিযোগ করেছেন। রিয়াদ চৌধুরী প্রায়ই পুলিশের নামে চাঁদাবাজি করে থাকেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি ও বামনা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদ রানা এই বিষয়ে বলেন, বামনা উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক রিয়াদ চৌধুরীর জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি ব্যাংক ম্যানেজার কায়সার হোসেন তাকে মুঠোফোনে জানান। এরপর ব্যাংক ম্যানেজারের আমন্ত্রণে তিনি, যুবদল আহবায়ক খোরশেদ আলম দিপু, বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক রায়হান নাজির ধলু এবং যুগ্ম আহবায়ক আরিফুর রহমান শিমুলসহ সোনালী ব্যাংকে যান। সেখানে ভুক্তভোগী দেলোয়ার হোসেনের কান্নার আকুতি দেখে তারা কৌশলে টাকা উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে তিনি ব্যাংক ম্যানেজারকে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বলেও জানান।
এই ঘটনা বামনার রাজনৈতিক অঙ্গনে ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। একজন যুবদল নেতার এমন কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। এখন দেখার বিষয়, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এবং যুবদল এই ঘটনায় অভিযুক্ত রিয়াদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়।

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝