পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট, রহমতপুর উপকেন্দ্র বরিশালের উদ্যোগে এবং কলাপাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় গোলপাতার বীজ বিতরণ ও চারা রোপণ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে কলাপাড়ার নবীপুর গ্রামে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ৩০ জন গোল চাষীর মাঝে ৫,০০০ গোল গাছের বীজ বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা পতিত জমির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং ভূমি ক্ষয় রোধের মাধ্যমে গুড় উৎপাদন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে এই বাগান সৃজন কর্মসূচীর গুরুত্ব তুলে ধরেন। তারা জানান, গোল গাছের শিকড় পুড়িয়ে দাঁতের মাজন এবং কচিপাতা থেকে দাঁতের বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক তৈরি করা যায়। এছাড়াও, উপকূলবর্তী এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গোল গাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই কারণে গাছটির বিস্তার বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট বরিশাল রহমতপুর উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রতন কুমার গনপতি বলেন, বাংলায় গোলপাতা এবং ইংরেজিতে নিপা পাম নামে পরিচিত এই পাম জাতীয় ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদটির রয়েছে অজস্র শিকড়যুক্ত খাটো কাণ্ড। সুন্দরবনে এটি প্রাকৃতিকভাবে জন্মায় এবং উপকূলের মানুষ গৃহস্থালির কাজে ও জ্বালানি হিসেবে এর পাতা ব্যবহার করে। স্থানীয়ভাবে অনেকে এর রস সংগ্রহ করে পান করে এবং গুড় তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে। তিনি আরও বলেন, গোল গাছের ফল গুচ্ছাকৃতির এবং অনেকটা তালের শাঁসের মতো। কচি অবস্থায় এই ফল খাওয়া যায়। ফলের ডগা কেটে রস সংগ্রহ করা হয়, যা আখ, তাল বা খেজুরের রসের মতোই মিষ্টি ও সুস্বাদু। এই রস সরাসরি পান করা যায় এবং এর থেকে তৈরি গুড়, পাটালি, মিষ্টি, পিঠে ও পায়েস অত্যন্ত সুস্বাদু। গরম লুচি, রুটি বা মুড়ির সাথে এই গুড় খেতে খুব ভালো লাগে। অনুষ্ঠানে কলাপাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ সহকারী কর্মকর্তা মো. ওয়ালিউল্লাহ, কৃষক উত্তম কুমার সরকার, শিক্ষক দিলীপ কুমার শিকারী ও সাংবাদিক মো. শরিফুল হক শাহীনও বক্তব্য রাখেন। বক্তারা গোল গাছের বহুমুখী উপকারিতার কথা উল্লেখ করে বলেন, আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী গোল গাছের মিষ্টি রস কৃমিনাশক এবং ডিহাইড্রেশন দূর করতে সহায়ক। এটি অসুস্থ শরীরে দ্রুত শক্তি যোগাতেও সাহায্য করে। গোল গাছের রস থেকে উন্নত মানের গুড়, চিনি ও ভিনেগার তৈরি করা সম্ভব। এছাড়াও, গোল গাছের ফল ভিটামিন ও মিনারেলে ভরপুর এবং এটি বিশেষত চর্মরোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এমনকি গোল গাছের রস দিয়েও চর্মরোগের ঔষধ তৈরি করা হয় বলে জানান বক্তারা। এই কর্মসূচী উপকূলীয় এলাকায় গোল গাছের চাষ সম্প্রসারণে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা যাচ্ছে।