সংবাদ শিরোনাম: |
তথ্য অধিদফতর বা প্রেস ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্ট (পিআইডি) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিদপ্তর। সরকারের অন্যতম এ দপ্তর সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের যাবতীয় সংবাদ প্রচার, তথ্যসম্পদ উন্নয়ন, তথ্য সংরক্ষণ, তথ্যের নিরাপদ সঞ্চালন, তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠা, অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কাজ করে থাকে। এককথায় সরকারের মুখপাত্র হিসেবে এ অধিদফতর কাজ করছে।
স্বাধীনতা পূর্বকালীন ঢাকা আঞ্চলিক তথ্য অফিস স্বাধীনতা উত্তর ১৯৭৩ সালে তথ্য অধিদফতর হিসেবে কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে এনাম কমিটির সুপারিশক্রমে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন গবেষণা ও তথ্য সংরক্ষণ (Research and Reference) উইংকে তথ্য অধিদফতরের সাথে একীভূত করা হয়। এছাড়া সরকারের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ প্রচার সেলকেও ফিচার শাখা নামে তথ্য অধিদফতরের সঙ্গে একীভূত করা হয়। জাতীয় প্রেক্ষাপট ও সময়ের প্রয়োজনে তথ্য অধিদফতরের বর্তমান অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। তথ্য অধিদফতরের সাতটি আঞ্চলিক তথ্য অফিস রয়েছে। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে আঞ্চলিক তথ্য অফিস তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে আঞ্চলিক তথ্য অফিস গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে পিআইডি নামেই ব্যাপক পরিচিত।
তথ্য সচিব কামরুন নাহারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এবং তথ্য অধিদফতরের প্রধান তথ্য অফিসার মোঃ শাহেনুর মিয়ার আন্তরিকতায় সরকারি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বরিশালসহ দেশের চারটি বিভাগে আঞ্চলিক তথ্য অফিস প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি উপপ্রধান তথ্য অফিসার ম. জাভেদ ইকবালের যোগদানের মধ্যদিয়ে নগরীর নিউ সার্কুলার রোডস্থ একটি ভাড়া বাড়িতে বরিশাল আঞ্চলিক তথ্য অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে নগরীর উত্তর আলেকান্দা রোডস্থ বটতলায় ‘কোস্ট ক্যাসল’ নামক ভবনের দ্বিতীয় তলায় এ অফিস স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে তথ্য অধিদফতরের প্রধান তথ্য অফিসার মোঃ নিজামূল কবীরের নির্দেশনায় এ অফিসের কার্যক্রম সুচারুভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
এ অফিসের সাংগঠনিক কাঠামোতে অনুমোদিত পদ রয়েছে ১৭ টি। অফিস প্রধানের পদবী হচ্ছে উপপ্রধান তথ্য অফিসার। পদটি পরিচালক পদমর্যাদার। এছাড়াও তথ্য ক্যাডারের আরও ৪টি ও ১০ম গ্রেডের ৩টি পদ রয়েছে। ১১ থেকে ২০ গ্রেডের পদ রয়েছে ৯টি। অফিসের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রশাসন শাখা, প্রচার শাখা ও হিসাব শাখা নামে তিনটি শাখা রয়েছে। সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণকল্পে এ অফিসে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ নিউজ রুম। যেটি অফিসের হৃৎপিণ্ড হিসেবে বিবেচিত। এ রুম থেকেই বরিশাল পিআইডির সুদক্ষ কর্মকর্তা- কর্মচারীবৃন্দ তাদের পেশাগত দায়িত্ব সম্পাদন করেন। অফিসের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তারা তথ্যবিবরণী প্রস্তুত, গণমাধ্যমে তথ্যবিবরণী প্রচার ও ফটো রিলিজ এবং সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে সংবাদ গতিধারা প্রেরণ করেন। পাশাপাশি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রেস ক্লিপিংস স্থানীয় পত্রিকা থেকে সংগ্রহ করে তা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ ও ফলাবর্তন (ফিডব্যাক) সংগ্রহ করা হয়। ফলে এসব কার্যক্রম সরকার ও জগণের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করে।
সরকারের প্রচার প্রতিষ্ঠান হিসেবে বরিশাল আঞ্চলিক তথ্য অফিস সরকারি কার্যাবলী, নীতি, সিদ্ধান্ত, উন্নয়ন পরিকল্পনাসহ অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় জনগণ ও রাষ্ট্রের স্বার্থে বরিশালের স্থানীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমে তথ্যবিবরণী আকারে প্রচার করে থাকে। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে জনস্বার্থে আয়োজিত অনুষ্ঠান এবং ভিভিআইপি ও ভিআইপিসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের কার্যক্রমের তথ্যবিবরণী তৈরি ও আলোকচিত্র ধারণ করে তা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করে। তথ্যের এই অবাধ প্রবাহের মাধ্যমে সাধারণ জনগণ সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে পারেন যা দেশ ও জাতিগঠনে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে এবং সরকারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জনমত গঠনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
বরিশাল পিআইডি টু-ওয়ে ট্রাফিক হিসেবে বরিশালের স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি প্রেস ক্লিপিংসের মাধ্যমে সরকারের গোচরীভূত করে। জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট এমন সব সংবাদ প্রেস ক্লিপিংসের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করা হয়, যা তাদেরকে স্থানীয় পর্যায়ে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে অবহিতকরণসহ সেসব সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় দাপ্তরিক পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তা করে। এভাবেই জনগণের সাথে সরকারে সৌহার্দ বৃদ্ধিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এ অফিস।
পিআইডির বরিশালের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রতিদিন প্রাধান্য দিয়ে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে সংবাদ গতিধারা তৈরি করে তা তথ্য অধিদপ্তরসহ বরিশাল বিভাগে ও বিভাগের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের প্রেরণ। এতে করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা খুব সহজেই বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ পেয়ে থাকেন। তাই জনগণের স্বার্থ রক্ষার্থে সংবাদ গতিধারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে বলে বিবেচিত।
বরিশাল পিআইডি সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম, নীতি-পলিসি ও কর্মপরিকল্পনা এবং স্থানীয় ও জাতীয় সমস্যাগুলোকে আলোকপাত করে জনস্বার্থে নিয়মিত ফিচার ও প্রবন্ধ আকারে প্রকাশ করে থাকে। এসব ফিচার লিখতে প্রথিতযশা সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও পিআইডি’র কর্মকর্তাবৃন্দ ভূমিকা পালন করেন। এরূপ চর্চা সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রচার লক্ষ্যমাত্রা ও চাহিদা পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়া বরিশাল অঞ্চলের সামাজিক অসঙ্গতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির নানান দিক ফিচার লেখনীর মাধ্যমে ফুটে ওঠে যা এ অঞ্চলের মাটি ও মানুষের স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এছাড়া এ অফিস স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সহয়তা প্রদান করে। সেলক্ষ্যে প্রতিবছর অংশীজনের (সংবাদকর্মী) সাথে একাধিক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টার আগমন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানসমূহের সংবাদধারণের জন্য সাংবাদিকদের মিডিয়া পাস ইস্যুতে সহায়তা প্রদানও এ অফিসের অন্যতম একটি কাজ। ভিভিআইপি ও ভিআইপিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অনুষ্ঠানের ফটোকভারেজের মাধ্যমে গণমাধ্যমকে সহায়তা প্রদান করে। স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়তে গুজবের বিরুদ্ধে এ অফিস নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, নিবন্ধিত অনলাইন মিডিয়ার বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে সমন্বয় সাধন এবং স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী, বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিদের সাথে এ অফিস লিয়াজোঁ রক্ষা করে।
বরিশাল পিআইডি সরকারের ই-গভার্নেন্স সেবাকে গতিশীল করতে নিয়মিতভাবে ওয়েব পোর্টাল হালনাগাদ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়া আর্থিক বিষয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে অর্থ বিভাগের আইবাস সিস্টেমের সাথে যুক্ত থেকে কাজ করার পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে দাপ্তরিক পত্রাদি আদান-প্রদানে ডি-নথির ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে। [[
সর্বোপরি, এ অফিস জনগণ ও সরকারকে সেবা প্রদান তথা সরকারের নির্ভরযোগ্য সংবাদ উৎস হিসেবে সবসময় জনকল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকারি সংবাদ ও ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচারের জন্য সরবরাহ করে। এ অফিস জনগণের স্বার্থকে সবসময় গুরুত্ব দিয়ে থাকে যা সরকারের সাথে জনগণের সেতুবন্ধ রচনায় ও উন্নয়ন কাজে জনঅংশগ্রহণে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
(পিআইডি ফিচার)
লেখক: আফরোজা নাইচ রিমা, উপপ্রধান তথ্য অফিসার
সার্বিক সহযোগিতায়:
মোঃ আহসান কবীর, সিনিয়র তথ্য অফিসার, মোঃ হাসনাইন, সহকারী তথ্য অফিসার ও মোঃ জাকির হোসেন, প্রধান সহকারী, আঞ্চলিক তথ্য অফিস, বরিশাল।