×
সোমবার ● ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ৫ ফাল্গুন ১৪৩১
সংবাদ শিরোনাম :
সংবাদ শিরোনাম: নলছিটিতে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতার রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলায় এনটিভিতে নিয়োগ পেলেন মো. নাঈম হাসান ঈমন সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও এতিমদের নিয়ে কক্সবাজার ভ্রমন করল দূর্বার তারুণ্য ফাউন্ডেশন নোনা জলের কষ্টের জীবন ৩৮ লাখ টাকা নিয়ে হজ্ব কাফেলা এজেন্সির পরিচালক জাকারিয়া উধাও নলছিটিতে ইয়াবাসহ আটক-২ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না রফিকুল ইসলাম জামাল। ঝালকাঠিতে ট্রাক চাপায় প্রাণ গেল মোটরসাইকেল চালকের মির্জাপুরে নির্মাণ শ্রমিকদের ১২ দফা দাবিতে মানববন্ধন ও র‍্যালি অনুষ্ঠিত মঠবাড়িয়ায় রোপন করা ধানের বীজ নষ্ট করার অভিযোগ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)
অক্ষমতা জয়ের লড়াইয়ে সফল এক শিক্ষক খাইরুল
প্রকাশ : বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর , ২০২৪, ০১:৪৬:০০ এএম
বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি:
GK_2024-09-19_66eb2fed04500.jpeg


চোখে দেখেনা তাতে কি ? হাত- তো আর অচল নয়। হাত দিয়েই পড়াচ্ছেন শিক্ষার্থীদের। শারীরিক অক্ষমতা জয় করে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে আজ সফল কাম হয়েছেন সে। জড়িয়ে পড়েছেন শিক্ষকতার এক মহান পেশায়।

বরগুনার বেতাগী উপজেলার ২৪ নং দক্ষিন ভোলানাথপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহাকারী শিক্ষক হিসেবে ২০১৬ সালের ২৩ জানুয়ারী যোগদান করেন। ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐ বিদ্যালয়টিতে তিনি দীর্ঘ ৯ বছর যাবত শিক্ষকতা করে আসছেন।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় দক্ষিন ভোলানাথপুর গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ সিকদারের ছেলে খাইরুল ইসলাম।

তিনি চোখে দেখতে পায় না। কিন্তু তিনি জীবনে যা দেখেছে, এবং মানুষকে যে ভাবে আলোর পথ দেখাচ্ছে করতে পেরেছে আমরা হয়তো অনেকেই দৃষ্টিশক্তি থেকেও তা করতে পারিনি। প্রতিবন্ধিতা তার জীবনে খুব একটা বাধাঁ হতে পারেনি। উল্টো অন্ধত্বকে জয় করেই জীবনের প্রতিটি ধাপে সাফল্য পেয়েছেন।

খাইরুলের শারীরিক অক্ষমতার অজুহাতে বিয়েতে অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ২০১৮ সালে সালামা আকতারের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তাদের সংসারে আফিফা নামের ৩ বছরের একটি কণ্যা সন্তান রয়েছে।

জানা গেছে, বাবা মৃত: মোহাম্মদ সিকদার। মা হাজেরা বেগম। কৃষক বাবার ৪ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে সে ছোট ও একমাত্র দৃষ্টি প্রতিবন্ধী (বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি)। খাইরুলের ভাই-বোনের কেউ এসএসসির পর আর গন্ডি পারায়নি। পরিবারে সেই সবোর্চ শিক্ষিত ব্যক্তি। জন্মগত ভাবেই তার এ অবস্থা। সাদা ছড়ি দিয়ে তিনি চলাফেরা করেন। কিন্ত পিছিয়ে নেই, সব কিছুতে সে অগ্রগামী। শারীরিক অক্ষমতা তাকে দমাতে পারেনি। চোখ নেই তাতে তার কোন দু:খ নেই। বেল পদ্ধতিতে পড়াশোনা করে হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে পড়ার বিরল অভ্যাস গড়ে তুলেছেন।

দরিদ্র পরিবারের সন্তান খাইরুল ছিলেন বেশ মেধাবী। পড়াশোনার প্রতি ছিল প্রবল ঝোঁক। ব্যতিক্রম এই অদম্য মানুষটি দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার সূযোগ না হলেও অনেক কষ্টে বরিশাল দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সরকারী বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম, নূরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি, সৈয়দ সরকারি হাতেম আলী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি ও বি.এস.এস এবং বরগুনার লাল মিয়া টিচার্স টেনিং কলেজ থেকে বিএড করেন।

সরজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, তার দুটি চোখই অচল। গভীর মনোযোগ ও এগ্রাগ্রতার সাথে শ্রেনী কক্ষে বই ছুঁইয়ে, কখনো হাত উচিয়ে শিক্ষার্থীদের বাংলা, সমাজ, ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিষয়ে পাঠদান করাচ্ছেন। তার আশা শিক্ষার্থীদের ভাল ফলাফলের। কিন্ত তাতে অন্তরায় রয়েছে। জানা গেছে,তাদের বিশেষ পদ্ধতির বই সংকটে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শিক্ষা অফিস থেকে শিশুদের পড়ানের জন্য তাকে এ পর্যন্ত কোন বই সরবরাহ করা হয়নি। তাই নিজস্ব উদ্যোগে বরিশালে গিয়ে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় থেকে পুরানো ব্ই সংগ্রহের মাধ্যমে পাঠ্য বই তৈরী করে শিশু শ্রেনীতে পড়াচ্ছেন। যার ফলে পড়াতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়।

বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া শিক্ষার্থী মোসা: শান্তা বলেন,‘স্যার চোখে না দেখলেও সুনামের সাথে ক্লাসে পড়াচ্ছেন তিনি। তার পাঠদানে আমরা ভীষন খুশি। আশাকরি ভাল ফলাফল বয়ে আনতে সক্ষম হবো।’

উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভোলানাথপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ভবরঞ্জন সিকদার বলেন, তিনি অন্যন্য শিক্ষকদের তুলনায় দক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে শ্রেণি কক্ষে পাঠ দান করান। তার এই অদম্য চেষ্টা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে।

শিক্ষক খাইরুলের কাজ করার ক্ষেত্রে নানা সংকটও রয়েছে। বিশেষ পদ্ধতির বই ্অভাবের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানে ক্লাসরুমগুলোও প্রতিবন্ধীবান্ধব নয়, ক্যাম্পাসে নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য নেই কোনো র‌্যাম্পের ব্যবস্থা। যার দরুণ প্রতিবন্ধী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নানা বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে। স্থানীয়রা জানায়, এসব ক্ষেত্রে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের জোড়ালো পদক্ষেপ থাকার প্রয়োজন, সেখানে সঠিক ব্যবস্থাপনায় দেখা যাচ্ছে দীর্ঘসূত্রতা।

এখানেই শেষ নয়, গাড়ীর অভাবে নিয়মিত পায়ে হেঁটে সাথে সহযোগি নিয়ে স্কুল করেন। বাড়ীতে থেকে স্কুলে যাওয়ার রাস্তাটি খুবই চলাচল অনুপোাযোগি। এমনিতেন রাস্তায় সক্ষম মানুষেরই যাতায়াতে সমস্যা, সেখানে সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে যাতায়াতে তাকে অবর্ণনীয় কষ্টে চলাচল করতে হচ্ছে। ফলে কখনো পা ফসকে, কখনো চাড়মা উঠে যাচ্ছে।

খাইরুল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি হওয়ায় লেখাপড়া, চাকরি, সমাজে বেঁচে থাকাই যেন যুদ্ধের থেকেও বড় লড়াই। যেখানে খাইরুল দুর্বোধ্য। আঙুল দিয়ে দেখিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও শক্তি হিসেবে অনুপ্রেররণা জুগিয়েছে। সবার মধ্যে সচেতনতা ছড়িয়ে সে আজ আর অক্ষম নয়, ভিন্নভাবে সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাদিরা বেগম সহ অন্যান্যদেরও একই অভিব্যক্তি।

বেতাগী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ওয়াহিদুর রহমান বলেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিরা সৃষ্টিকর্তার অভিশাপ নয়। বিশেষ করে আমাদের শিক্ষক খাইরুল অত্যন্ত প্রতিভাদীপ্ত। সে এখন গোটা শিক্ষক সমাজের গর্ব ও এগিয়ে যাওয়ার উজ্বল দৃষ্টান্ত। পাঠদানের ক্ষেত্রে তার বইয়ের সংকট থাকলেও কর্তৃপক্ষের কাছে বিশেষ পদ্ধতির বইয়ের চাহিদা পত্র পাঠানো হয়েছে।

বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারুক আহমদ বলেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি হলেও শিক্ষক খাইরুল সমাজের দৃষ্টান্ত। কোনো প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি তাকে। নিজে যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তেমনি সমাজ গড়ার কাজেও রাখছেন অবদান। এখন অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা। তার প্রতি আমাদের সহযোগিতার হাত সর্বাত্মক প্রসারিত থাকবে।

 

 

 

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝