×
সোমবার ● ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ৫ ফাল্গুন ১৪৩১
সংবাদ শিরোনাম :
সংবাদ শিরোনাম: নলছিটিতে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতার রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলায় এনটিভিতে নিয়োগ পেলেন মো. নাঈম হাসান ঈমন সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও এতিমদের নিয়ে কক্সবাজার ভ্রমন করল দূর্বার তারুণ্য ফাউন্ডেশন নোনা জলের কষ্টের জীবন ৩৮ লাখ টাকা নিয়ে হজ্ব কাফেলা এজেন্সির পরিচালক জাকারিয়া উধাও নলছিটিতে ইয়াবাসহ আটক-২ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না রফিকুল ইসলাম জামাল। ঝালকাঠিতে ট্রাক চাপায় প্রাণ গেল মোটরসাইকেল চালকের মির্জাপুরে নির্মাণ শ্রমিকদের ১২ দফা দাবিতে মানববন্ধন ও র‍্যালি অনুষ্ঠিত মঠবাড়িয়ায় রোপন করা ধানের বীজ নষ্ট করার অভিযোগ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)
পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা হাসিব এখন পঙ্গু, লেখা পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায়
প্রকাশ : বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর , ২০২৪, ০৩:৩১:০০ পিএম
জাকির হোসেন, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি:
GK_2024-09-19_66ebf032c6833.jpg


বৈশম্য বিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা আমতলীর হাসিব এখন পঙ্গু। ডান হাত অচল হয়ে যাওয়ায় মেধাবী হাসিবসহ তার পুরো পরিবার এখন লেখাপড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। হাসিব আমতলী উপজেলার আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের পূর্ব চরকগাছিয়া গ্রামের আবুল বাশারের ছেলে। সে এবছর ঢাকার তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা থেকে আলিম পরীক্ষা দিয়েছে।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলার আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের পূর্ব চরকগাছিয়া গ্রামের আবুল বাশার ও মাহমুদা দম্পতির বড় ছেলে মো. হাসিব। ছোট বোন হিরামনির বিয়ে হয়ে গেছে বছর দুয়েক আগে। হাসিব ঢাকার তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার ছাত্র। এবছর সে কামিল পরীক্ষা দিয়েছে। (তার রোল ৪২৫২৮২)। এর আগে সে আমতলী বন্দর হোসাইনিয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদরাসা থেকে বিজ্ঞান শাখায় জিপিএ ৫ পেয়ে কৃতিত্বের সাথে ২০২২ এ পাস করেন। কামিল পরীক্ষায়ও পিপিএ ৫ পাবেন বলে আশা করছেন হাসিব। হাসিবের স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ায়। কিন্তু পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার পর ডান হাত অচল হয়ে যাওয়ায় তার স্বপ্ন আদৌ পুরন হবে কিনা জানে না হাসিব।
দেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন শুরু হলে হাসিব যোগ দেন আন্দোলনে। ১৮ জুলাই বিকেলে সাড়ে ৫টার সময় কয়েক হাজার ছাত্র উত্তরা বিএনএস সেন্টার থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলে মিছিলে পুরো উত্তরা বিএনএস সেন্টার যখন কেপে ওঠে পুলিশ মারমুখী হয়ে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বৃষ্টির মতো গুলি ছুরতে থাকে। এসময় পুলিশের ছোড়া একটি গুলি এসে হাসিবের গলার শ্বাস নালীর ডানপাশে লাগে। গুলিটি গলা ভেদ করে ডান ঘারের পিছনের মাংশপেশী ছিরে বের হয়ে যায়। এসময় হাসিব অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিতে পরেন। মিছিলে অংশগ্রহনকারী ছাত্ররা এবং তার ক্লাশের বন্ধু হোসাইন আলম তাকে ধরাধরি করে উত্তরা কৃসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার অবস্থার আরো অবনতি হলে রাত ৯টার সময় নেয়া হয় পঙ্গু হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসার ১দিন পর তার জ্ঞান ফিরে। সেখানে ৪দিন থাকার পর রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় চিকিৎসকরা তাকে ছারপত্র দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। এঅবস্থায় বাড়িতে এবং হাসপাতালে প্রায় মাসাধিকাল ধরে চলে তার চিকিৎসা। চিকিৎসায় গলার সামনের অংশ শুকালেও পিছনের ঘাঁ এখনো শুকায়নি। গুলিতে ঘারের রগ ছিড়ে যাওয়ায় ডান হাতটি অচল হয়ে গেছে হাসিবের। ডান হাত দিয়ে কোন কাজতো দুরের কথা কিছু লিখতেও পারেন না হাসিব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কান্না জড়িত কন্ঠে হাসিব বলেন, সে দিন আমরা আমাদের দাবী আদায়ের জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছি। এর বেশী কোন অপরাধ করি নাই। কিন্তু পুলিশ আমাদের আন্দোলন দমন করার জন্য নির্বিচারে গুলি চালায়। ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেলে আমরা প্রায় কয়েক হাজার ছাত্ররা উত্তরা বিএনএস সেন্টারের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে বের হই। পুলিশ মিছিলে আমাদের উপর গুলি চালায়। পুলিশের ছোড়া একটি গুলি আমার গলার ডান পাশে লেগে পিছনের ঘারের নীচ দিয়ে বের হয়ে যায়। এর পর আমি আর কিছুই বলতে পারি না। পরের দিন যখন আমার জ্ঞান ফিরে তখন আমি জানতে পারি পঙ্গু হাসপাতালের বিছানায়। যে ভাবে আমার গলায় গুলি লেগেছে তাতে আমি মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছি। বাঁচার কোন আশা ছিল না। আমার বন্ধু বান্ধব বাবা মা কেউ ভাবেনি আমি বেঁচে ফিরবো। তবে এখন আমি পঙ্গু হয়ে গেিেছ। গুলির আঘাতে আমার ডান ঘরের রগ ছিরে যাওয়ায় আমার ডান হাত অচল হয়ে গেছে। এই হাত দিয়ে কোন কাজতো দুরের কথা খাতায় কিছু লিখতেও পারিনা। রাতে ঘুমাইতে পারি না যন্ত্রনায় শুধু ছটফট করি। জানি না আমার হাত আদৌ ভালো হবে কিনা। যদি ভালো না হয় তাহলে আমার সকল স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয়ে যাবে। আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম আমি চিকিৎসক হবো। কিন্তু যদি লিখতে না পারি তাহলে কিভাবে ভর্তি পরীক্ষা দেব। আমি এখন পুরো হতাস।
হাসিবের বন্ধু হোসাইন আলম বলেন, শুরু থেকেই হাসিবসহ আমার সক্রিয়ভাবে বৈশম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহন করে আসছি। ঘটনার দিন ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেলে উত্তরা বিএনএস সেন্টারে আমাদের মিছিলে পুলিশ নির্বচারে গুলি চালায়। অনেক ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়। হাসিব আমার পাশে ছিল। তার গলায় একটি গুলি লেগে ঘারের পিছন থেকে মাংশ ছিরে বের হয়ে যায়। হাসিব তখন অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আমরা ছাত্ররা সেখান থেকে উদ্ধার করে উত্তরা কৃসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যাই। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ওই রাতেই পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি। যে ভাবে হাসিবের গলায় গুলি লেগেছে তাতে তার বাঁচার কথা না। আমরা তার বাঁচার আশা ছেরে দিয়েছিলাম। আল্লাহ নিজে তাকে বাঁচিয়েছে।
হাসিবের মা মাহমুদা বেগম ছেলের কথা জিজ্ঞেস করতেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন আর বলেন, বাবা আমার এক ছেলে এক মেয়ে। হাসিব বড়। মেয়েডারে বিয়া দিছি। পোলাডারে লেহা পড়া করাই। পোলায় মেট্রিকে ব্যামালা ভালো পাস করছে। ও ডাক্তার অইতে চায়। এহন পুলিশের গুল্লি খাইয়া মরনের ধাইরদা আইছে। মোরা কেউ ভাবি নাই ও বাঁচপে। আল্লায় হগগুলডির দোয়া অরে বাঁচাইয়া রাখছে। তয় বাচলে কি অইবে। ডাইনআতটা পঙ্গু অইয়া গ্যাছে। অর আশা ছিল ডাক্তার অইবে। এহন ল্যাখতে না পারলে ক্যামনে ডাক্তার অইবে।
হাসিবের বাবা মো. আবুল বাশার বলেন, আমার ছেলে দেশের মঙ্গলের জন্য ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রায় মারা গেছিল। অল্লায় বাঁচাইছে। বাঁচলেও ছেলেটার ডান হাত এখন পঙ্গু হয়ে গেছে। আমার ছেলেকে যারা পঙ্গু করছে বর্তমান সরকারের কাছে তাদের বিচার চাই। তিনি আরো বলেন, চিকিৎসকরা বলেছেন হাসিবকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারলে তার হাত ভালো হবে তাই বর্তমান সরকারের নিকট অনুরোধ যাতে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝