সংবাদ শিরোনাম: |
❒ দায়িত্ব পালন কালে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা আতত্মসাৎ এবং মামলায় ১ মাস হাজত বাস করেন
আমতলী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্তুত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গেপানের অভিযোগে দুর্দীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা দায়ের করেছে। দুদক পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রাসেল রনি বাদি হয়ে বুধবার দুদকে মামলাটি দায়েরের পর তা বরগুনার স্পেশাল জজ আদালতে উপস্থাপন করেন। বাদি নিজেই তদন্ত শেষে আদালতে মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করবেন বলে জানা গেছে। এর আগে কলেজের দায়িত্ব পালন কালে তার বিরুদ্ধে ৩টি মামলাসহ ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ছিলো। মামলায় তিনি ১ মাস হাজত বাস করেন।মামলা সূত্রে জানা গেছে, ৫২ লাখ ১০ হাজার টাকার জ্ঞাত আয় বহির্তুত সম্পদ বিবরনীতে গোপন রাখার বিষয়টি প্রাথমিক তদন্তে প্রমানিত হওয়ায় মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়। তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুতই আদালতে মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
দুদক পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রাসেল রনি জানান, মজিবর রহমান দুদকে ২০১৬ সালের ৩০ জুন তার সম্পদ বিবরনীতে নিজ নামে অর্জিত ৫৪ লাখ ৪৯ হাজার টাকার সম্পদ থাকার কথা উল্লেখ করেন। তবে সম্পদ বিবরণী পর্যালোচনায় দেখা যায় তিনি ওই সময়ে ১ কোটি ৬ লাখ টাকার সম্পদ অর্জণ করেছেন। সম্পদ বিবরণীতে তিনি ৫২ লাখ ১০ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেন।
আমতলী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালে মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। এসময় তার বিরুদ্ধে অঅমতলী উপজেলা সিনিয়র জুডি শিয়াল আদালতে ৩টি মামলা পর্যন্ত হয়।
আমতলী কলেজ সূত্রে জানা গেছে, সাবেক অধ্যক্ষ মো. মজিবুর রহমান ২০০৮ সালের ৫ জুলাই আমতলী সরকারী কলেজে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি নানা ভাবে দুর্নীতি করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। তার এ দুনীতির বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে একই কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহকারী অধ্যাপক (পরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ) গাজী মো. আব্দুল মন্নান বাদী হয়ে ২০১৭ সালের ১৪ ফেবরুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর একটি আবেদন করেন। আবেদনে মো. আব্দুল মন্নান রশিদ বইয়ে জালিয়াতি, কলেজ শিক্ষকদের নিকট থেকে ঘুষ গ্রহন, গাছ বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ, ব্যাংকের হিসাব থেকে টাকা আত্মসাৎ, পরীক্ষায় দুর্নীতি এবং এসকল টাকায় নিজের নামে বিপুল পরিমান জমি ক্রয় করারসহ ৬ টি বিষয়ের উপর অভিযোগ আনেন। গাজী আব্দুল মন্নানের আবেদন পত্রটি ২০১৭ সালের ২৪ ফেরুয়ারি শিক্ষা অধিদপ্তর গ্রহন করে তা তদন্তের জন্য মাউসি ২৩ এপ্রিল ২০১৭ তারিখের ৩৭.০২.০০০০.১০৩.০৪.০১৪.২০১৭/১৫৮০/সি-৯ সি-১ নং স্মারকে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বরিশাল অঞ্চলের তৎকালীন পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুসকে দায়িত্ব প্রদান করেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি ২০১৭ সালের ৬ ও ৭ মে কলেজের সকল শিক্ষক ও কর্মচারী এবং অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মো. মজিবুর রহমানের উপস্থিতে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেন।
তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ২ আগস্ট প্রফেসর মো. ইউনুস শিক্ষা অধিদপ্তরের মাহাপরিচালক বরাবর একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে প্রফেসর মো. ইউনুস উল্লেখ করেন যে, ছাত্রদের নিকট থেকে ভর্তি ফি, পরীক্ষার ফি, সেশন চার্জ, বেতন ও অন্যন্য টাকা রশিদের মাধ্যমে আদায় করার কথা। রশিদ জালিয়াতি করে অধ্যক্ষ মজিবুর রহমান ১৮৪৩ জন শিক্ষার্থীর নিকট থেকে এক বছরে আদায় করেছেন ৯২ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা। অথচ খাতায় আয় দেখিয়েছেন ২৩ লাখ টাকা। এভাবে ৮ বছরে অধ্যক্ষ মো. মজিবুর রহমান আত্মসাৎ করেছেন ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। কলেজের ৪৪ জন শিক্ষক কর্মচারীদের নিকট থেকে জাতীয় করণের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে ঘুষ দেয়ার কথা বলে মজিবুর রহমান ২১ লাখ ১০ হাজার টাকা গ্রহণ করে নিজে আত্মসাৎ করেন। এ ঘটনায় আমতলী সরকারী কলেজের চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী ইউসুফ মিয়া বাদী হয়ে ২০১৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি ৪০ দিন হাজত বাস করেন।
এছাড়া ২০১৫ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় অধ্যক্ষের সহযোগিতায় পরীক্ষা কেন্দ্রে ব্যাপক হারে নকল সরবরাহ করায় পরীক্ষা কেন্দ্র বাতিল করা হয় এবং অধ্যক্ষ মো. মজিবুর রহমানকে ৫ বছরের জন্য পরবর্তী সকল পরীক্ষাকার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়। কলেজ জাতীয় করনের পরপরই তারাহুরা করে কলেজের অধ্যক্ষ মো. মজিবুর রহমান কলেজ ক্যাম্পাসের আকাশ মনি, চাম্বলসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ বিক্রি করে ২ লক্ষ টাকাসহ সর্বমোট ৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রফেসর মো. ইউনুস দুর্নীতি আশ্রয় নিয়ে আয় করা সমুদয় টাকা কলেজ তহবিলে ফেরৎ দেয়ার সুপারিশ করেন তার রিপোর্টে। এ ছাড়া অধ্যক্ষ মো. মজিবুর রহমান কলেজের টাকা আত্মসাৎ করে তার নিজের নামে ৮৪ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার কৃষি জমি ক্রয়সহ তার ছেলেদের বিভিন্ন প্রাইভেট কলেজে আয় বর্হিভূত লাখ লাখ টাকা খরচ করে লেখা পড়া করান বলেও উল্লেখ করেন।
অভিযুক্ত সাবেক অধ্যক্ষ মো. মজিবুর রহমান বলেন, দুদকের মামলা আমি আইনী ভাবে মোকাবেলা করবো। দায়িত্ব পালন কালীন সময়ে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার দুনীতির বিষয়ে জানতে চাইলে এ বিষয়ে তিনি কোন কথা বলতে পাননি।