সংবাদ শিরোনাম: |
দেশের দুই সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই দিনে দুটি হত্যাকাণ্ড দেশবাসীকে বিমূঢ় করে তুলেছে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় জাতি বিস্ময়ে ফেটে পড়েছে যেন। সবাই বলছে, এ কেমন বিশ্ববিদ্যালয়! এ কেমন ছাত্র সমাজ? বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একটা গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তি রয়েছে, দেশের ছাত্র সমাজের অগ্রবর্তী অংশই এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে থাকে। এই বিশ্ববিদ্যালয়েই তোফাজ্জল হোসেন নামের এক যুবককে বুধবার রাতে যেভাবে সংঘবদ্ধ অপশক্তির শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে, তা বর্ণনাতীত। চোর সন্দেহে তিন দফায় তার ওপর চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন। কয়েক বছরের ব্যবধানে এই যুবকের মা, বাবা ও ভাই মৃত্যুবরণ করলে তিনি হয়ে পড়েছিলেন নিঃসঙ্গ। মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে ক্ষুধার পেট নিয়ে ঘুরতেন রাস্তায় রাস্তায়। বুধবারও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেছিলেন কিছুটা অন্ন জোগাতেই হয়তো। চোর সন্দেহে তাকে আটক করা হয় এবং নিষ্ঠুরতার এক চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে তাকে মেরে ফেলার আগে খেতে দেওয়া হয় ভাত।
ওদিকে একই দিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ গণপিটুনির শিকার হয়ে ঢলে পড়েছেন মৃত্যুর কোলে। আন্দোলনরত ছাত্র সমাজের ওপর হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে হত্যা করা হয়। বলা বাহুল্য, ওপরের দুটি ঘটনাই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। ঘটনা দুটি নিঃসন্দেহে সামগ্রিকভাবে ছাত্র সমাজের ভাবমূর্তিতে লেপন করেছে কলঙ্ক। অবশ্য ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে এ দুই ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে, হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সমগ্র দেশবাসী প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন। এসব প্রতিবাদের মুখে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা পর্যন্ত ঢাবির ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জাবির ঘটনায় এ সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদকেও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আমরা আশা করব, এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেককেই সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হবে।
আমরা গভীরভাবে লক্ষ করছি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সফল হওয়ার দেড় মাস পরও দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তী সরকার ও ছাত্র সমন্বয়কদের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। এ দায়িত্বে অবহেলা করলে জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
দেশে বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো অবস্থায় নেই। প্রায় নিষ্ক্রিয় পুলিশের বিকল্প হিসাবে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতা দিয়ে মাঠে নামানো হয়েছে। আমরা মনে করি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য নৈরাজ্য ঠেকাতে জনগণের উচিত সেনাবাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা। আমরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের নির্লিপ্ততা লক্ষ করছি। অবশ্য আইন উপদেষ্টা বলেছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বলতেই হবে, সরকারের আর নির্লিপ্ত থাকার সুযোগ নেই। আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান না নিলে সরকার জনপ্রিয়তা হারাবে বৈকি।